Sunday, October 12, 2014

কবিতার মা ও তার ছেলেপুলে


 রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

শোনো কবিতার মা, তোমার ছেলেপুলে গুলো
ইদানিং ভীষন জ্বালাতন করছে আমায় ।

পড়ার টেবিলে এসে লাফায় এলোমেলো
কলম পেলেই তুলে নেয় হাতে – কি সাহস !
জানো তো সারাদিন কি রকম ব্যস্ত থাকি
রাতে একটু ভালো ঘুমের দরকার --

ছেলেপুলে গুলো কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে অসভ্য
ঘুমের ভেতরে বুকে সুড়সুড়ি কেটে
জাগায় আমাকে । আলো জ্বেলে দিয়ে
টেনে এনে বসায় টেবিলে । বলে লেখো

একেমন ফাজলামো বলো তো !
মগজের ভেতর দ্রিমদ্রিম পিটোচ্ছে বাদ্যযন্ত্র
তোমার ছেলেপেলে ছিলো কি বদমাস
না হয়েছে
ওদের বারন কোরে দিও । সাবধান
ফের যদি বিরক্ত করে, ওদের এক এক জনকে
আমি কিন্তু বেঁধে রেখে দেবো কাগজে
ছেলেপুলেদের সাবধান কোরে দিও !

চাঁদের ভিতর চাঁদ ভাঙে’


_____রুদ্র গোস্বামী
 

আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক।
আমার কষ্টে খুব কাঁদুক।
আমার সুখে সে আলো আলো হাসুক।
তার তিলের মতো কলঙ্ক থাকুক,
সোনার মতো রূপ থাকুক।
তাকে দেখে আমি ভাবি
সব থেকে সুন্দর দৃশ্যটি বুঝি এই ।
আমার তাকে দেখতে ভালো লাগুক।
তাকে ছুঁয়ে আমি বলি,
সে আমার ভীষণ রকম সুখ।
আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক
তার জন্ম শুধু আমার জন্যে থাকুক।
তার মৃত্যু শুধু আমার জন্যে থাকুক ।
তাকে পেয়ে আমি বলি,
তার জন্যে আমি এর আগেও বহুবার জন্মেছিলাম।
তার জন্যে আমার অপেক্ষা ছিল,অশ্রু ছিল।
অজস্র চিঠিতে তাকে আমি ভালবাসি লিখেছিলাম।
আমি চাই একটা চাঁদ উঠুক
তার কথা শুধু আমার জন্যে থাকুক,
তার ব্যথা শুধু আমার জন্যে থাকুক।
এমন তো নয় মেয়ে বলে কেউ চাঁদ ভাববে না ।
এমন তো নয় মেয়ে বলে কারো রূপ খুজতে নেই ।

"আমার চেয়ে আরোও ভালো মেয়ে পাবা"

"আমার চেয়ে আরোও ভালো মেয়ে পাবা"
বাক্যটি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে খুব সহজভাবে কানে এল রাতুলের।
"আমি রাখছি" বলে সঙ্গে সঙ্গে ফোনের লাইন কেটে দিল রাতুল।
গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটার সাথে রাতুলের সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না। শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া। তার উপর আজ আবার মেয়েটার এই রকম একটা বাজে চাওয়া।
মেজাজটাই বিগড়ে গেল রাতুলের। সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজের নালীটার বাতাসটাকে আবার দূষিত করতে করতে চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল রাতুল।
এ কি শুনলো রাতুল? কার মুখ থেকে এ কথা বের হলো? যে মেয়েটি প্রতিদিন ভোরে ফোন দিয়ে জাগাত রাতুলকে, সে মেয়েটি?
যে মেয়েটি রাতুলের অসুস্থতার কথা শুনে নিজে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে রাতুলের খোঁজ নিত পাঁচ মিনিট পরপর, সে মেয়েটি?
যে মেয়েটি রাতুলের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য এটা ওটা কত কিছু করতে অনুরোধ করত, সে মেয়েটি?
যে মেয়েটি রাতুলের সমস্ত সুখ দুঃখের সঙ্গী হত, সে মেয়েটি?
যে মেয়েটি রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেয়ে রাতুলকে ফোন করতো ভয় কাটাবার জন্য, সেই মেয়েটি?
যে মেয়েটি সকালে ভার্সিটিতে পৌছে ফোন করে বলতো যে "পৌছে গেছি। তুমি নাশতা করে নাও", সেই মেয়েটি?
যে মেয়েটি রাতুলের....
মেয়েটিকে নিয়ে রাতুলের দেখা স্বপ্নগুলো আজ কেন জানি একটু অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। ফোনে ম্যাসেজের রিং বাজলো। মেয়েটিরই ম্যাসেজ। অতি আগ্রহ নিয়ে ওপেন করলো রাতুল।
"তোমাকে সবসময় যোগ্য আর প্রতিষ্ঠিত হতে বলি ভাল মেয়ে পাওয়ার জন্য। নজর এত নিচু কেন? বুয়েট পড়ুয়া মেয়েকে বৌ করবে। নৃবিজ্ঞান কোন বিষয় হল?"
ম্যাসেজটি পড়ার পর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না রাতুল। যে মেয়েটিকে না দেখে ভালবাসতে শুরু করেছিল, যে মেয়েটিকে দেখার পর ভালবাসাটা আরোও তীব্র হয়েছিল, যে মেয়েটির জন্য রাতুল তার পঁচা লাইফস্টাইল চেইন্জ করে ফেলেছিল, আজ সেই মেয়েটিই তাকে....
অনেকটা অভিমানের সুরেই ম্যাসেজের রিপ্লাই করলো রাতুল, "কোনো কথা বলবে না, একদম চুপ।"
"আজ তো শুক্রবার, যাবে না বিকেলে পাংকু সাজ দিয়ে বাইরে?"
আবার ম্যাসেজ মেয়েটির।
এমনিতেই মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে রাতুলের। তার উপর আবার মেয়েটির ফান! নিজেকে নিজের কাছেই কেমন জানি লাগছে রাতুলের।
"আমাকে মেরে ফেলতে পারবে?" রাতুল রিপ্লাই করলো।
জবাব এল, 'না, পারবো না'
ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিল রাতুল। পরক্ষণেই আবার ব্যাটারী আর খোলস তুলে নিয়ে আসলো। হয়ত এই ফোনটা দিয়েই আবার ইমুর মায়াভরা কণ্ঠটি শুনে নিজেকে সুখের সাগরে......