Saturday, February 28, 2015

প্রথম ও শেষ গন্তব্য



- হাসান ইমতি
 
উত্তাপহীন ম্লান শরৎ বিকেল কাশফুল রঙা সাদা কামিজের
শুভ্র জমিন নীল আকাশের উদাসী নীলের ছটায় রাঙিয়ে
সহসা তুই এসে দাড়ালি আমার পৌরুষের দোরগোড়ায়,
এক ধরনের নিঃসীম উপেক্ষা ঠিকরে পড়ছিল তোর
চাহনিতে, সেও তোকে খুব মানিয়ে গিয়েছিল সেদিন,
কি ভালো, কি ভালো যে লেগেছিল আমার তোকে,
মনে হয়েছিল চলমান সময়টা থমকে যায় তো যাক,
বাদ বাকি সব হিসেব নিকেশ মিথ্যে হয় তো হোক,
কোন নবায়নযোগ্য ক্ষতি নেই, নেই পোষা দুঃখবাদ,  
জন্ম জন্মান্তরে তুই শুধু আমার পরিণতি হয়েই থাক
সে থেকে সাদা কাশ ফুলের প্রতি, শরতের প্রতি আমার
বেহিসাবী পক্ষপাত, সেই থেকে পৃথিবীর বাদবাকি ঋতুরা
মৃত আমার কাছে, পৃথিবীর বাদবাকি সত্যরা অপ্রমানিত
আমার তুইমুগ্ধ চোখে, বাদবাকি স্বপ্নরা অর্থহীন আমার
তুইময় বোধে, সেই থেকে সবটুকু আমিত্ব জমিয়ে রেখেছি
তোর তুইর প্রত্যাশায়, আমার একচোখা দৃষ্টির ছায়াপথ
কেবলই ক্রমাগত নিবদ্ধ হয়ে থাকে সৌরতারা খচিত
তোর নিজস্ব ছায়াময় ঝুল বারান্দার নিঃসীম শূন্যতায়,
অনন্ত আধার বৃত্তে নিজস্বতায় দাড়িয়ে থাকা অনপেক্ষ তুই
সে থেকে অদ্যবধি আমার পরিণতিহীন প্রথম ও শেষ গন্তব্য

আমি মানুষ



- হাসান ইমতি
 
যদি না মেলে প্রতিদানের নিশ্চয়তা ...!
তবে কেন এই শর্তহীন ভালোবাসা ...... ? ?
কারন আমি মানুষ ......

তাতে কি হয়েছে ...... ?
আমি ভালোবাসা দিয়ে জিতে নিতে পারি সব ...

এই যা ! তুমি কি অবুঝ ...... !!
তাইতো আমি মানুষ ......
  

যদি না থাকে সাফল্যের ন্যূনতম সম্ভবনা ... !
তবে কেন এই অবিরত সংগ্রাম ...... ? ?
কারন আমি মানুষ ......
  
তো কি হয়েছে ... ?
আমি কখনো হার মেনে নিতে জানি না ...

আহ! তুমি কি একগুয়ে ...... !!
তাইতো আমি মানুষ ...


যদি থাকে বহুবিধ সত্য অপ্রকাশিত ... !
তবে কেন এই অন্তহীন রহস্যপ্রিয়তা ......?
কারন আমি মানুষ .........
  
হলই বা মানুষ, কি যায় আসে ......?
আমি নিগুঢ়ের সাথে সেধেছি বিজয়ের গান ......

ওহ ! তুমি দেখি পাগল ...... !
তাইতো আমি মানুষ ...


যদি কোন সুন্দরই না হয় অবিনশ্বর ... !
তবে কেন এই সর্বকালীন সৌন্দর্যপ্রিয়তা ...... ?
কারন আমি মানুষ ......?
মানুষ হলেই কি সব সৌন্দর্যে পাবে অধিকার ... ?
আমি ভালোবাসি জীবন ও জগতের সুন্দর কিছু যা ...

হুম ! তুমি বড় স্বার্থপর ... !!
তাইতো আমি মানুষ ...


যদি আপন পর সবাইকে নিয়েই সমাজ সংসার ...!
তবে কেন এই একপেশে আত্মমগ্নতা ......... ?
কারন আমি মানুষ ......

তাতে কি যায় আসে ...... ?
আমি কেবল আত্ম তুষ্টিতেই হই পূর্ণ ......

ওহ ! তুমি কি একঘেয়ে ...... !!
তাইতো আমি মানুষ ......
    

যদি ভালো বেসে দুঃখই মেলে প্রতিদানে ...!
তবে কেন এই নিরন্তর আকুলতা ............ ? ?
কারন আমি মানুষ .........

তা কেন ............?
আমি হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসি ...

ইস ! তুমি কি বোকা......... !!  
তাইতো আমি মানুষ ...

ফেরা



- হাসান ইমতি

প্রায় এক যুগ পর অবশেষে সত্যিই আবার ফিরে এলাম,
এই খানে ঝুপড়িমত চা সিগারাটের একটি দোকান ছিল,
এক বুড়ো চা ওয়ালা আর তার ঝগড়াটে দুই বউ ছিল,
একটি বউ আবার কড়কড়ে যুবতী ছিল, তার হাতের কড়া
লেবু চা ছিল তার চেয়েও, তার অহেতুক বাধভাঙা হাসির,
তার দুধেল খুনসুটির চেয়েও তরতাজা ও উত্তেজক,  
দোকানময় তাই তখন অনেক খদ্দেরের ভিড়ও ছিল,
এখানে কেটেছিল অনেক বন্ধুময় লেবুগন্ধি বিকেল
এখানে সময় থমকে যেত গন্তব্যহীন মানুষের মত

রমিজ বুড়োর চায়ের দোকানের কথা জানতে চাইলে
আজ আর কেউ বলতে পারলো না, চিনলও না কেউ,
স্মৃতিময় পুরনো শহরতলিতে মনে হয় এত দিন পর ফিরে
আসা একটি কষ্টকর ভুল, এভাবে হয়তো কখনো ফিরতে
হয় না ফেলে আসা মৃত স্মৃতির কাছে, সামনে এগিয়ে
মৃন্ময়ের সেলুনের খোঁজ নিলাম, যদি জানা যায় কিছু,
সে তো আর কাঁচা ঝুপড়ি দোকান নয়, রীতিমত কংক্রিট
আর চুন সুরকির পাকা দালান বাড়ি, তাই চিনল কেউ কেউ,
ইন্ডিয়া চলে গেছে যুদ্ধের বছর, এর বেশী কিছু জানা গেল না,
মৃন্ময়ের নাদুস নুদুস ফর্সা বউ ও গণ্ডাকয় ছেলে পুলেও ছিল,
তাদের নাম নিশানাও আরও অনেকের মত হারিয়ে গেছে
এই শহরতলীর পরিবর্তনশীল আলো ঝলমলে দিনপঞ্জি থেকে   

জানা গেলো না গলির মোড়ের বুড়ো হরিহর ময়রার মিষ্টির
দোকান, নন্দীলাল পণ্ডিতের পুথিঘর লাইবেরি, কিম্বা মিহিরের
ছাপাখানার কোন হদিসও, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এইসব
অপ্রয়োজনীয় মানুষদের এই শহরের কেউ আজ আর চেনে না,
এরা আজ আর বদলে যাওয়া শহরের হাঁসি কান্নার অংশ নয়

খুজতে খুজতে অবশেষে ফিরে এলাম পুরনো সেই প্রিয় ঠিকানায়,
সেই চুন সুরকির পুরনো দালান ঘর, সবুজ ঘাসময় উঠোন বাড়ি,
বাড়ীর সামনে ক্রিকেট খেলার খোলা মাঠ, প্রতি বিকেলে ব্যাট
বলের খেলা, খেলার আড়ালে খেলা, চোখে চোখে খেলা, কথার
খেলা, অপেক্ষার খেলা, এখানে কেটেছে অনেক স্মৃতিময় সময়,
কিন্তু কিছুই আজ আর নেই আগের মত, বদলে গিয়েছে বিস্তর,  
বদলে গিয়েছে মানুষ, বদলে গিয়েছে সময়, বদলে গিয়েছে সব,
এক যুগ পর ফিরে আমিই কেবল রয়েছি পুরনো ঘড়িতে স্থির

ডেভলপারের অশেষ বদান্যতায় সেখানে আজ জ্বলজ্বল চোখে
ধরণীর নরম বুক কংক্রিটের কঠিন পায়ে মাড়িয়ে নির্ভুল দাড়িয়ে
আছে বারতলা মাল্টিপ্লেক্স, বুকে বসুমতি বিল্ডার্সনামের
অত্যুজ্জ্বল সাইন বোর্ড ঝুলে আছে উন্নতির রাজসাক্ষী হয়ে,
খোঁজ নিজে জানলাম, বার তলায় সর্বমোট চব্বিশটি ফ্ল্যাট,
নাগরিক ইট সুরকির আকাশহীন লালচুলো আধুনিক বস্তি,
এরই কোন একটির টানেই বহুদিন পর হয়তো আমি ফিরেছি,
ডাক নাম তার ছিল রিমঝিম, এই নামে তাকে কেউ আজ
আর চিনল না, সামাজিক নিয়মে সল্প পরিচিতা, রক্ষণশীল সে
সময়ে তার পুরো নামটিও জানা হয়নি কখনো, তার চোখের
তারায় কেবলই ছিল সাগরের নীল আহবান, তার অদেখা
প্রবাসী বাবার নাম ফয়েজ বা সরফরাজ গোছের কিছু ছিল,
বংশ পদবীও আজ ঠিক মনে নেই, সে অনেকদিন আগের কথা,  
কে আমি, কেন এসেছি, কোথায় এসেছি, কার কাছে এসেছি
এইসব নানাবিধ সঙ্গত সামাজিক প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই আজ,
ফিরে যাবার ছাড়পত্র হাতে আসা আমার বশেও নেই অনন্ত সময়,
তাই আজ খোঁজ মিলল না ফেলে আসা কিছু প্রিয় অতীত ভুলের,
একই পৃথিবী, একই আকাশ, তবু কোন কিছুই আজ এক নয়,
বদলে গিয়েছে সময়, বদলে গিয়েছে মানুষ, বদলেছে ঠিকানা,  
এই পৃথিবীতে থেকেও সেই স্মৃতিময় মানুষগুলো আজ আর নেই