লেখকঃ সোহেল রানা
পর্ব-২
লাইট অফ করে আবার শুয়ে পড়ল শিহাব।
কেউ যেন তার কানে কানে ফিসফিস করে
বলতে লাগল: খুব কষ্ট হচ্ছে শিহাব? এবার
তো বুঝতে পারছ হৃদয়টা ভেঙে গেলে কত
যে যন্ত্রণা হয়।"
শিহাব আবারও চিৎকার করে লাইট অন
করল। আবারও কাউকে দেখতে পেলনা।
ভাবল, হয়তো মনের ভুল। মানসিক চাপে
হয়তো এমনটা হচ্ছে। অনেক কষ্টে রাতটা
কাটাল সে।
পরদিন সাদিয়ার এনগ্যাজমেন্ট। পাত্রপক্ষ
যখন রিং পরাতে আসল। শিহাব তখন হানা
দিল সেখানে। কিন্তু তাকে সাদিয়ার
চাচারা আটকে রাখল একটা রুমে।
সাদিয়াকে রিং পরিয়ে চলে গেল
পাত্রপক্ষ।
তারপর গভীর রাতে সবাই মিলে ঐ রুমে
গেল যেখানে আটকে রাখা হয়ছে
শিহাবকে। সাদিয়ার বাবা বললেন: আমার
মেয়ের পিছু ছেড়ে দে। নইলে কিন্তু
বাঁচতে দেবনা। একদম গুম করে ফেলব"
শিহাব জানে সাদিয়ার বাবার কথাটা
মিথ্যে না,, উনি পারবেন গুম করতে। কারন
আগেও করেছেন। আশরাফ নামে একজনের
সাথে তার বৈষয়িক ঝামেলা ছিল। তারপর
একদিন আর আশরাফকে খুজে পাওয়া
যায়না। সবার ধারণা, আশরাফকে সাদিয়ার
বাবা আমজাদ খান খুন করে গায়েব করে
দিছে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে আমজাদ
খান আইনের ধরাছোয়ার বাইরে।
ক্ষমতাশালী লোক হলে যা হয় আর কি।
সাদিয়াকে শিহাব এতবেশি ভালোবাসে
যে মৃত্যুকে সে পরোয়া করেনা। বলল:
আমাকে গুম করার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আমি সাদিয়ার পিছু ছাড়বনা।"
তার কথা শেষ না হতেই সবাই মিলে
শিহাবের শ্বাসরোধ করল। তারপর তাকে
নিয়ে গেল কবরস্থানে। তারা কবর খুঁড়তে
লাগল। কবর খুঁড়া শেষ হলে শিহাব এর
অজ্ঞান দেহটা কবরে ফেলল। যখন মাটি
দিতে যাবে, হঠাৎ শুনতে পেল একটা
নুপুরের ধ্বনি। কে যেন আসছে। নুপুরের
ধ্বনিটা ধীরে ধীরে কাছে চলে
আসতেছে। আবছা চাঁদের আলোয় দেখা
গেল গোরস্থান এর গেইট দিয়ে ধীরপায়ে
হেটে আসছে একটা মেয়ে। পরনে একটা
সাদা শাড়ি। শাড়ির আচলটা তার বাতাসে
দুলতেছে। চুলগুলো উড়তেছে। অথচ
আশেপাশে তাদের বাতাসের কোন অনুভূতি
নেই। মেয়েটা হেটে তাদের দিকেই
আসছে। আমজাদ সাহেব ভাবলেন একসাথে
মেয়েটাকেও গায়েব করতে হবে। কারন,
তিনি তার পাপের প্রমাণ রাখতে পছন্দ
করেননা।
টর্চের আলো ফেললেন তিনি মেয়েটার
মুখে। তারপর ভূত দেখার মতো চমকে
উঠলেন। এই মেয়েটা সাদিয়ার সাথে
অনেকবার এসেছিল তাদের বাড়িতে।
কিন্তু সে তো মারা গেছে। তাহলে এই
মেয়েটা কে? ভাবার আর সময় নেই দৌড়ে
পালাল সবাই।
ইভা শিহাবকে তুলল কবর থেকে। তার
স্পর্শে শিহাব যেন জ্ঞান ফিরে পেল।
অনুভব করল, কে যেন তাকে দু'হাতে তুলে
নিয়ে হাটতেছে। খুব ভালো লাগতেছে
তার। এত্ত ভালো কখনো লাগেনি। কিন্তু
বাতাসে এটা কিসের সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে।
আশেপাশে কেউ নেই, শুধু সেই পারফিউমের
গন্ধটা নাকে লেগে আছে। আর মাথাটা
ঝিমঝিম করতেছে। অনেক মেরেছে ওরা
তাকে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত করেছে।
তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই। কিন্তু সে
এখানে এল কি করে? আর জামাতেও এত
মাটির দাগ কেন?
রহস্যটা কি, বুঝতে পারলনা শিহাব। ভাবতে
ভাবতে চোখে আর ঘুম এলনা।
সকালে বাড়িতে পুলিশ দেখে শিহাব
অবাক হল। তাকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে
গেল আমজাদ খানের খুনের দায়ে। গতরাতে
কে যেন কবরস্থানে মাথাটা নিচের দিকে
দিয়ে, পা দুইটা উপরে দিয়ে শরীরের
অর্ধেক তার পুঁতে রেখেছে একটা কবরে।
সকালে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
কবরের পাশে শিহাবের হাতঘড়ি পাওয়া
যায়, তাই পুলিশ সন্দেহ করে শিহাবকে
নিয়ে যায়। আমজাদ খানের পরিবারের
দাবি এ খুন শিহাবই করেছে।
শিহাব খুন করেনি, এ কথা পুলিশ বিশ্বাস
করতে রাজি না। সারাদিন অনেক
অত্যাচার করল তার উপর। রাতেও রেহাই
দেইনি।
ডিউটি শেষে ইন্সপেক্টর আবির অনেক
রাতে বাসায় ফিরতেছিল। হঠাৎ তার
বাইকটা খারাপ হয়ে গেল। সাহায্যের জন্য
কাউকে পেলনা নির্জন রাস্তায়।
বাইকটাকে ঠেলে ঠেলে সে বাসায়
ফিরিতেছিল। শুনশান নিরবতা চারদিকে।
হঠাৎ প্রচন্ড এক দমকা বাতাস শুরু হল, শুনতে
পেল একটু নুপুরের ধ্বনি। সাদা শাড়ি পড়া
একটা মেয়ে দেখতে পেল তারপর।
বাতাসে তার চুল আর শাড়ির আঁচল
উড়তেছে। মেয়েটা ধীরে ধীরে এগিয়ে
আসতেছে তার দিকে.......
;
চলবে........
____\\\______
♥________অশরীরী প্রেম________♥
________
No comments:
Post a Comment
Thank You!