Saturday, July 8, 2023

অশরীরী প্রেম

গল্পঃ অশরীরী প্রেম____♥ 
লেখকঃ সোহেল রানা . 
___________পর্ব-৫_________ 

ইভা কোন উত্তর না দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তার প্রথম কাজ এখন শিহাবকে বাঁচানোতার প্রথম কাজ এখন শিহাবকে বাঁচানো। আশামনি শিহাবের কাছে এসে বসল। মাথায় তার হাত বুলিয়ে বলল: হে মানব যুবক, এত সুন্দর হওয়ার কি দরকার ছিল তোমার? কেন আমি জীন হয়ে তোমার প্রেমে পড়লাম? প্লিজ, বিয়ে কর আমায়। শিহাব বলল: না আশা, প্লিজ আমাকে যেতে দাও। কার জন্য যেতে চাইছ তুমি, যে কিনা কয়েকদিন পর আরেকজনের বউ হবে তার জন্য? আমি সাদিয়াকে বুঝাব, তাকে বুঝালে সে নিশ্চয়ই বুঝবে। ফিরে আসবে আমার কাছে। দয়া করে আমাকে যেতে দাও। সেই সুযোগ তুমি পাবেনা।" বলল আশামনি। -"দেখি, কি করে আটকে রাখতে পার তুমি তাকে" হঠাৎ এক নারী কণ্ঠে চমকে উঠল আশামনি। পিছনে ফিরে দেখল, ইভা দাঁড়িয়ে আছে। ইভা তখনও শিহাবকে দেখা দিলনা। শিহাব শুনতে পেলনা ইভার কথা। সে দেখল আশামনি অদৃশ্য কেউ একজনের সাথে যুদ্ধ করতেছে। কিন্তু বেশিক্ষণ পেরে উঠলনা সেই অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে। পরাজিত হল আশামনি। আর পরাজয় মানে মৃত্যু। শিহাব জীবনের প্রথম দেখল চোখেরই সামনে একটা জীনের মেয়ের মৃত্যু। তাও খুব অদ্ভুতভাবে। অদৃশ্য কোন এক শক্তি এসে তার ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা করে দিয়েছে। এতকিছু দেখে শিহাব আর স্বাভাবিক থাকতে পারলনা। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ধরে ফেলল ইভা তাকে। তারপর শিহাবকে কোলে নিয়ে এগিয়ে চলল গন্তব্যে।  

________আড়ালে ভালোবাসা_______

 শিহাবের জ্ঞান ফিরে এলে সে নিজেকে তার বেডে আবিষ্কার করল। অবাক হল সে। এটা কিভাবে সম্ভব? সে তো জীনের জগতে ছিল? তাহলে...... এতক্ষণ কি তবে সে স্বপ্ন দেখেছিল। আশামনির চেহারাটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। ভেসে উঠল। তার ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা। এই সবকিছু কি তবে স্বপ্ন ছিল? আরও অবাক হল সে তার ব্যাচেলর রুমটাকে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো দেখে। কে করেছে এসব? সবচেয়ে বেশি অবাক হল সে কিচেনরুমে গিয়ে। পেটে ক্ষিদে অনুভব করতেই সে কিচেনে গেল রান্না করতে। কিন্তু আশ্চর্য! সবকিছু কে যেন ইতিমধ্যে রান্না করে দিয়ে চলে গেছে। শিহাব দেখল তার সব পছন্দের আইটেমগুলো রান্না করা। শিহাব মনে করার চেষ্টা করল। না, তার স্পষ্ট মনে আছে সে রান্না করেনি। তবে কে করল এসব? আর ভাবতে পারলনা সে। মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগল। তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করল। আশ্চর্য! সব খাবার থেকে সে একটা পারফিউম এর সুগন্ধ পাচ্ছে। ইভার সেই পারফিউম! ইভা কি তবে ফিরে এসেছে? না, তা কি করে হয়? অসম্ভব একটা ব্যাপার। মরা মানুষ ফিরে আসবে কিভাবে? মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হল তার। যার কোন উত্তর তার কাছে নেই। , পরদিন "আলাভী" নামে একজনের সাথে পরিচয় হল শিহাবের। শিহাব আনমনা হয়ে ভাবতে ভাবতে রাস্তা পার হচ্ছিল। দ্রুত স্পিডে তখন সাদিয়া গাড়ি ড্রাইভ করে আসছিল। উদ্দেশ্য তার শিহাবকে গাড়ির চাকায় পিষে ফেলা। এই শিহাব তার বাবাকে খুন করেছে। পরক্ষণে কোথা থেকে যেন উদয় হল এই আলাভী। বাঁচিয়ে দিল সে শিহাবকে। দু'জনের পরিচয় হল তখন। শিহাব জানতে পারল আলাভীর পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। একটা ভাই ছিল, তাকেও কিছুদিন আগে হারিয়েছে। থাকার মতো কোন জায়গা নেই তার। শিহাব আলাভীকে নিজের রুমে নিয়ে এল। আজ থেকে এখানেই থাকবে সে। নতুন বন্ধুকে নিয়ে কয়েকদিন খুব ভাল কাটল তার। আলাভী খুব মজার মানুষ শিহাব বুঝল। এরকম একটা বন্ধু পেয়ে সে খুশি। শিহাবকে রান্না করতে হয়না, রুম পরিষ্কার করতে হয়না। প্রতিদিন কেউ যেন তার রুম পরিষ্কার করে, সবকিছু গুছিয়ে রাখে, আর তাদের দু'জনের জন্য খাবার তৈরি করে রাখে। কে করে এসব? রহস্যটা এখনও জানা হলনা শিহাবের। একদিন খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল দু'জন, শিহাব আর আলাভী। গভীররাতে আলাভী ঘুম আর আলাভী। গভীররাতে আলাভী ঘুম থেকে জেগে উঠল। খুব অদ্ভুতভাবে সে তার চোখদুটো খুলল। শিহাবের শরীরের উপর উঠে বসল সে। তারপর এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করল। ভ্যাম্পায়ার!!!!!!!!!!!! মুখের দাঁতগুলো তার অনেক বড় বড়, লম্বা লম্বা হয়ে গেল। লম্বা লম্বা দাঁতগুলো সে শিহাবের ঘাড়ে বসাবার জন্য এগিয়ে নিয়ে গেল। আজ শিহাবের সব রক্ত চুষে খাবে সে। এই ছেলেটার জন্য তার ভাইকে জীবন দিতে হয়ছে অশরীরীর হাতে। আলাভী যে মুহূর্ত শিহাবের ঘাড়ে দাঁত বসাতে যাবে সেই মুহূর্তে তাকে পেছন থেকে কে যেন টেনে তুলে ফ্লোরে আছাড় মারল। আলাভী দেখল তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার ভাই এর মৃত্যুদাতা সেই অশরীরী। ইভা আর দেরি করলনা। খুরের মতো লম্বা লম্বা নখ বের করে ভ্যাম্পায়ারটাকে শেষ করে দিল। যে অবস্থা করেছিল আগের ভ্যাম্পায়ারটাকে। জোরে এক আর্তনাদ করে উঠল ভ্যাম্পায়ার আলাভী! তারপর মারা গেল। শিহাবের ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখল ফ্লোরে ভ্যাম্পায়ার রূপে আলাভী পড়ে আছে। আশেপাশে আর কাউকে দেখতে পেলনা। আলাভী আসলে ভ্যাম্পায়ার! সে এতদিন একটা ভ্যাম্পায়ার এর সাথে থেকেছে? ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল শিহাবের। কিন্তু আলাভীর এ অবস্থা কে করেছে? কে তাকে এই ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে বাঁচাল? আলাভীর প্রাণহীন দেহের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল শিহাব: কে?????? কে করেছ এসব???? আড়াল থেকে বেরিয়ে এসো........ শিহাবের ডাকে কেউ সাড়া দিলনা........ শিহাব আবারও চিৎকার করল: প্লিজ, কে তুমি? বেরিয়ে এসো......প্লিজ...... এবার যেন শিহাব ভেঙে পড়ল একদম। এই কয়েকদিনে তার সাথে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে স্বাভাবিক থাকা অসম্ভব। শিহাব মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। হঠাৎ একটা নারীকণ্ঠ মিষ্টিসুরে ডাক দিল: শিহাব........ শিহাব মুখ তুলে তাকাল। দেখল তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অশরীরী ইভা। অশ্রুসিক্ত চোখদুটো তার জলজল করতেছে। ইভার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তেছে অশ্রুর বন্যা। অশরীরাও কাঁদতে পারে! ইভাকে দেখে শিহাব আরো বেশি চমকে উঠল........ ; চলবে......!!!

No comments:

Post a Comment

Thank You!