Sunday, October 12, 2014

উর্বশী

– বিষ্ণু দে

আমি নহি পুরূরবা। হে উর্বশী,
ক্ষনিকের মরালকায়
ইন্দ্রিয়ের হর্ষে, জান গড়ে তুলি আমার ভুবন?
এসো তুমি সে ভুবনে, কদম্বের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে।
ক্ষণেক সেখানে থাকো,
তোমার দেহের হায় অন্তহীন আমন্ত্রণবীথি
ঘুরি যে সময় নেই- শুধু তুমি থাকো ক্ষণকাল,
ক্ষণিকের আনন্দাঅলোয়
অন্ধকার আকাশসভায়
নগ্নতায় দীপ্ত তনু জ্বালিয়ে যাও
নৃত্যময় দীপ্ত দেয়ালিতে।
আর রাত্রি, রবে কি উর্বশী,
আকাশের নক্ষত্রাঅভায়, রজনীর শব্দহীনতায়
রাহুগ্রস্ত হয়ে রবে বহুবন্ধে পৃথিবীর নারী
পরশ-কম্পিত দেহ সলজ্জ উত্সুক?
আমি নহি পুরূরবা। হে উর্বশী,
আমরণ আসঙ্গলোলুপ,
আমি জানি আকাশ-পৃথিবী
আমি জানি ইন্দ্রধনু প্রেম আমাদের।

ম’রে যেতে সাধ হয়


-আনিসুল হক

শাহানা,
তুমি গোলাপী জামা প’রে জীবন্ত
গোলাপের মতো
ক্যাম্পাসে এসো না, আমার
খারাপ লাগে।
সখী পরিবৃতা হয়ে মোগল-দুহিতার
মতো
করিডোরে অমন ক’রে হেঁটো না,
আমার খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি চিবুক নাড়িয়ে
রাঙা মাড়িতে
দুধ শাদা হাতে
লালিম জিহ্বায়
গিটারের তারের
মতো বেজে উঠো না —
দরদালান কেঁপে উঠে, ঢিল
পড়ে বুকের পুকুরে,
কাঁপে পানি থিরিথিরি, আমার
খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি টিফিন
আওয়ারে ক্লাসরুমে ব’সে
অমন করে রাধার মতো দীর্ঘ চুল
মেলে দিও না
অন্ধকার
করে আসে সারাটা আকাশ
নিবে যায় সবগুলি নিয়ন
কালো মেঘের
উপমা দিতে আমার
ভালো লাগে না।

শাহানা, তুমি ক্যাফেটেরিয়ায়
নিরেট চায়ের কাপে
ওই দুটি ঠোঁট রেখো না;
নিদাঘ খরার পোড়ে ঠোঁটের
বাগান,
মরুভূর মতো জ্বলে তৃষ্ণার্ত সবুজ;
আমার মরে যেতে সাধ হয়।

কবিতার মা ও তার ছেলেপুলে


 রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

শোনো কবিতার মা, তোমার ছেলেপুলে গুলো
ইদানিং ভীষন জ্বালাতন করছে আমায় ।

পড়ার টেবিলে এসে লাফায় এলোমেলো
কলম পেলেই তুলে নেয় হাতে – কি সাহস !
জানো তো সারাদিন কি রকম ব্যস্ত থাকি
রাতে একটু ভালো ঘুমের দরকার --

ছেলেপুলে গুলো কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে অসভ্য
ঘুমের ভেতরে বুকে সুড়সুড়ি কেটে
জাগায় আমাকে । আলো জ্বেলে দিয়ে
টেনে এনে বসায় টেবিলে । বলে লেখো

একেমন ফাজলামো বলো তো !
মগজের ভেতর দ্রিমদ্রিম পিটোচ্ছে বাদ্যযন্ত্র
তোমার ছেলেপেলে ছিলো কি বদমাস
না হয়েছে
ওদের বারন কোরে দিও । সাবধান
ফের যদি বিরক্ত করে, ওদের এক এক জনকে
আমি কিন্তু বেঁধে রেখে দেবো কাগজে
ছেলেপুলেদের সাবধান কোরে দিও !